শরীর নামের অবিশ্বাস্য যন্ত্র

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) - Science (Exercise Book) - NCTB BOOK

একটি যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ যেমন আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে একটি সামগ্রিক কাজ সম্পাদন করে তেমনি আমাদের মানব শরীরকেও একটি বড়ো যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়। মানবশরীরের বিভিন্ন সিস্টেম বা তন্ত্র নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে আমাদের পুরো শরীর নামের সিস্টেমটিকে সচল রাখে, এবং সাম্যাবস্থায় রাখে। আগের শ্রেণিতে ও তোমরা মানবশরীরের কয়েকটি তন্ত্র সম্পর্কে জেনেছ, এবার এই শ্রেণিতেও একইভাবে আরও কয়েকটি তন্ত্র কীভাবে নিজেদের মধ্যকার আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম চালু রাখে সেটাই দেখা যাক!

প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন

  • ভুল করে কোনো গরম কিছু ছুঁয়ে ফেললে আমরা কী করি? ঝট করে হাতটা সরিয়ে নিই, তাই তো? যদি সরিয়ে না নিতাম তাহলে একটু পরে হয়তো হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আবার ঠান্ডা বরফ অনেকক্ষণ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হয়, মনে হয় হাত অবশ হয়ে আসছে। এই যে ঠান্ডা গরমের অনুভূতি, তা আমরা শরীরের কোন অংশ দিয়ে টের পাই বলো তো?
  • ঠিক ধরেছ, স্পর্শের অনুভূতি আমরা পাই আমাদের ত্বকের মাধ্যমে। খোসা যেমন ফল বা সবজির ভিতরের অংশকে সুরক্ষিত রাখে, তেমনি আমাদের শরীরকে আবৃত করে রাখে ত্বক। শরীরের কোনো অংশের ত্বকে কাটাছেঁড়া হলে আমরা ব্যথার মাধ্যমে টের পাই। আবার তোমরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ, শরীরের কোথাও কোথাও স্পর্শ করলে একটু বেশি তীব্র অনুভূতি হয় আবার কোথাও কোথাও একটু কম। বন্ধুদের কাতুকুতু দিয়ে নাস্তানাবুদ তো তোমরা হরহামেশাই করে থাকো।
  • বলো তো শরীরের কোন কোন অংশে কেটে গেলে আমরা ব্যথা পাই না, কিংবা স্পর্শের অনুভূতি পাই না? একটু ভেবে নিচে লিখে রাখো তোমার উত্তর:
  • চলো একটা মজার কাজ করা যাক-
  • জোড়ায় বসে এই কাজটি করতে হবে। একজন চোখ বন্ধ করে অথবা চোখ বাঁধা অবস্থায় তার হাতে কলম বা পেন্সিলের উল্টো প্রান্ত দিয়ে তার বাহুর ত্বকে কিছু পরিচিত শব্দ লেখো। যেমন হতে পারে-কলম, পতাকা, ছাগল ইত্যাদি।
  • চোখ বাঁধা অবস্থায় বলতে হবে তোমার বন্ধু হাতে কী লিখেছে। এভাবে দুজন দুজনের হাতে কলমের উল্টো দিক দিয়ে লিখে খেলাটি খেলতে পারো।
  • এখন ভেবে দেখো, এই অনুভূতির বাইরেও ত্বক আরও কিছু কাজ সম্পন্ন করে। গরমের দিনে আমাদের ঘাম হয় খেয়াল করেছ নিশ্চয়ই। একটু খেয়াল করে দেখো তো, আমরা কেন ঘামি, কখন ঘামি? শীতকালে ঘাম কেন হয় না? 
  • ত্বকের কাজ কী? ত্বকের গঠন আসলে কেমন? জানার জন্য অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের 'মানবদেহের অঙ্গ ও তন্ত্র' অধ্যায় থেকে ত্বকতন্ত্র অংশটি বের করো। ৫/৬ জনের দলে বসে এই অংশটি পড়ে আলোচনা করো। পড়া হয়ে গেলে শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে আলাপ করো।
  • ত্বকের কোন অংশগুলো আমরা দেখতে পাই না বলো তো? তোমার উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • এবার একে একে প্রতি দল থেকে একজন দাঁড়িয়ে ত্বকের যে অংশগুলো দৃশ্যমান সেগুলো নিজেদের শরীরে চিহ্নিত করে দেখাও এবং অংশগুলোর বর্ণনা দাও। প্রয়োজন হলে অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের সাহায্য নাও।
  • আমাদের কেন ঘাম হয়? ত্বকের কোন অংশে কীভাবে ঘাম নিঃসরণ হয়? তোমাদের উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • ত্বকতন্ত্র সম্পর্কে তো জানলে; এখন একটু ভেবে দেখো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে, স্থিতিশীল রাখতে ত্বকের কী কী কাজ করতে হয়? অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের সাহায্য নিয়ে তোমাদের উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • ত্বক আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এর যত্ন নেওয়াও তাই খুব জরুরি। কীভাবে ও কেনো ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে কিংবা খেলাধুলার পর তোমরা নিশ্চয়ই ভালো করে হাত-মুখ ধোও কিংবা গোসল করো। এছাড়াও আরও কীভাবে ও কখন কখন বিশেষ করে ঋতুভেদে কীভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায় তা দলে আলোচনা করো। আলোচনা হয়ে গেলে ক্লাসের বাকিদেরকে তোমাদের মতামত জানাও, অন্যদের মতামতও শোনো।

বাড়ির কাজ

মানুষের মতো অন্য সকল প্রাণীর শরীরেই তো ত্বক রয়েছে। কিন্তু সব প্রাণীর ত্বকের কাজ কি হুবহু একই? শ্বেত ভল্লুক, কচ্ছপ, সজারু এরকম আরও কিছু প্রাণী বেছে নিয়ে ভেবে দেখো তো এদের ত্বকের ধরনে কী কী বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে? এই বৈশিষ্ট্যগুলো এদের কী ধরনের বাড়তি সুবিধা দেয়?

প্রাণীর নাম 

ত্বকের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

এই বৈশিষ্ট্যগুলো এদের যেসব বাড়তি সুবিধা দেয়

শ্বেত ভল্লুক  
কচ্ছপ  
সজারু  
গিরগিটি  
   
   
   
   

 তৃতীয় সেশন

  • কোনো যন্ত্র চালাতে যেমন জ্বালানি লাগে ঠিক তেমনি আমাদের শরীরকে চালাতেও জ্বালানি লাগে। প্রাণী বা মানব শরীরে লাগে পানি, খাদ্য আর অক্সিজেন। তোমরা সপ্তম শ্রেণিতে 'হজমের কারখানা' অভিজ্ঞতায় খাদ্য পরিপাক সম্পর্কে জেনেছ। পরিপাককৃত খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের জন্য চাই অক্সিজেন। অক্সিজেন খাদ্যকে জারিত করে তাপশক্তি উৎপন্ন করে যা আমাদের শরীরকে সচল রাখে। এই তন্ত্রকে শ্বসনতন্ত্র বলে।
  • তুমি খেয়াল করলে দেখবে শুধু খাবার খেলেই যে আমরা শক্তি পাব তা কিন্তু নয়। তোমরা সবাই জানো বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য ছাড়াও আমাদের প্রয়োজন হয় অক্সিজেন যা আমরা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করি। চলো এবার জেনে নেওয়া যাক আমাদের শরীরের কোন অংশে এই শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
  • তার আগে চলো কয়েকবার গভীর দম নিয়ে শুরু করা যাক। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নাও। কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ো। এরকম করে দুই থেকে মিনিট কাজটির পুনরাবৃত্তি করো।
  • এবার চলো শ্রেণির সবাই মিলে একটা মজার কাজ করা যাক। এজন্য শ্রেণির সবাই হাতে একটি বেলুন নাও। শিক্ষক তোমাদেরকে বেলুনের ব্যবস্থা করে দিতে সহায়তা করবেন।
  • বুক ভরে দম (নিঃশ্বাস) নিয়ে একবার মাত্র ফুঁ দিয়ে (নিঃশ্বাস ছেড়ে) কে কত বড়ো বেলুন ফুলাতে পারো তা দেখা যাক।
  • বেলুন ফুলানো হলে, বাতাস না ছেড়ে সাবধানে গিঁট দিয়ে মুখটা বন্ধ করে হাতে ধরে রাখো। এবার চোখের অনুমানের ভিত্তিতে কার বেলুন কতবড়ো তা দেখো তো! তোমরা নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছো, সবার ফুসফুসে বাতাস ধারণ ক্ষমতা এক নয়। কারো বেশি, কারো কিছুটা কম। কেনো কম বা বেশি বলে মনে হয় বলে তোমাদের মনে হয়, শ্রেণিতে তোমার ধারণা সবার সঙ্গে শেয়ার করো। (একবার মাত্র ফুঁ দিয়ে কেউ কি বেলুনটাকে ফাটিয়ে ফেলতে পেরেছ? তাহলে বুঝতে হবে তার ফুসফুসের অনেক জোর!)
  • এখন আমাদের সবার শ্বাসের গতি কি সমান? আরেকটা ছোটো পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি মিনিটে তোমরা কে কতবার শ্বাসপ্রশ্বাস নাও তা গুনে দেখা যাক।
  • শুরুতেই সবাই একদম ধীর-স্থিরভাবে তোমাদের আসনে বসো। শিক্ষকসহ তোমরা সবাই এক মিনিটে কতবার দম নিচ্ছ, ও নিঃশ্বাস ছেড়ে দিচ্ছ তার হিসাব রাখতে হবে। ক্লাসের এক বা দুজন ভলান্টিয়ার ঘড়ি দেখে সময়ের হিসেব রাখার দায়িত্ব নিতে পারে। ঘড়ি দেখে 'শুরু' বলার পর থেকে তুমি কতবার শ্বাস নিচ্ছো ও কতবার ছাড়ছো তা গুনতে থাকো। ভলান্টিয়ার যখন এক মিনিট পর 'শেষ' বলবে তখন নিচে লিখে রাখো।
  • শিক্ষক কতবার দম নিয়েছেন জিজ্ঞেস করে দেখো। ক্লাসের বাকিদের সঙ্গেও তুলনা করে দেখো। (চাইলে ভলান্টিয়ারদের শ্বাসপ্রশ্বাসের হার দেখার জন্য আরেকটু সময় দিতে পারো, সেক্ষেত্রে তোমাদের আর কাউকে ঘড়ি দেখে সময়ের হিসাব রাখতে হবে) নিশ্চয়ই সবার দম নেয়ার সংখ্যা হুবহু সমান হয়নি?
  • তোমরা সবাই জানো আমরা নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় বাতাসের অক্সিজেন নেই এবং নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেই। তবে বিষয়টি এতটাও সরল নয়, কারণ বাতাসে অক্সিজেন ছাড়াও আরও নানা উপাদান থাকে। তার মধ্যে রয়েছে অন্যান্য গ্যাস থেকে শুরু করে ধূলিকণা, এমনকি নানা জীবাণুও। বাতাস থেকে ধূলিকণা, জীবাণু ও অন্যান্য গ্যাস ফিল্টার করে অক্সিজেনকে আলাদা করতে শ্বসনতন্ত্রের অঙ্গগুলো কাজ করে। চলো জেনে নেই মানুষের শ্বসনতন্ত্রের অঙ্গগুলো কী কী?
  • শ্বসনতন্ত্র কীভাবে গঠিত তা জানলে এর কাজ বুঝতে সহজ হবে। সেজন্য অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে 'মানুষের শ্বসনতন্ত্র'-এর চিত্রটা প্রথমে ভালো করে দেখো। এবার এসব অঙ্গ কোনটা কোথায় অবস্থিত, কাজ কী তা বই পড়ে এবং জোড়ায় আলোচনা করে বুঝে নাও।
  • যেসব অঙ্গ বাইরে থেকে দৃশ্যমান অথবা অনুভব করা যায় সেগুলো নিজের শরীরে সাবধানে খেয়াল করো, প্রয়োজনে স্পর্শ করে অনুভব করো।
  • এবার শ্বসনতন্ত্র কীভাবে কাজ করে তার একটা মডেল বানিয়ে দেখা যাক। শিক্ষকের পরামর্শে ৫/৬ জনের দলে ভাগ হয়ে যাও। শ্বসনতন্ত্রের মডেল কীভাবে বানানো যেতে পারে তা নিয়ে দলের সবাই আলোচনা করে দেখো।
  • এখানে শ্বসনতন্ত্র কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য একটা নমুনা মডেল দেয়া হয়েছে। তোমরা চাইলে অন্য কোনো উপায়েও মডেল বানিয়ে দেখতে পারো। এখানে দেয়া মডেলের জন্য তোমাদের দলের প্রয়োজন হবে তিনটি বেলুন, একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল, পানীয় খাওয়ার পাইপ/স্ট্র, স্কচটেপ, কাঁচি। পরের সেশনে আসার আগে এই উপকরণগুলো জোগাড় করে এনো।

চতুর্থ ও পঞ্চম সেশন

  • পুরো শ্বসনতন্ত্রকে ভালোভাবে বুঝার জন্য শ্বসনতন্ত্রের মূল অঙ্গগুলো নিয়ে একটি মডেল বানানো যাক।
  • একটি কোমল পানীয়র নল বা ড্রিংকিং স্ট্রর এক প্রান্ত কাঁচি দিয়ে একটু চিরে নিয়ে এর ভেতর অপর দুটি স্ট্রর প্রান্ত এমনভাবে প্রবেশ করাও যাতে এটি দেখতে ইংরেজি । বর্ণের মতো দেখায়।
  • স্ট্র তিনটির সংযোগস্থলে স্কচটেপ পেঁচিয়ে এমনভাবে জোড়া লাগিয়ে নাও যাতে সংযোগ স্থলের ছিদ্র দিয়ে কোনো বাতাস বের হতে না পারে।
  • এবার দুটি বেলুন Y আকৃতির ছড়ানো দু প্রান্তে লাগিয়ে নাও এবং স্কচটেপ পেঁচিয়ে আটকে দাও যাতে বাতাস বের হতে না পারে। একমুখ খোলা প্রান্তে বাতাস দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নাও বেলুনটি ফুলছে কি না এবং সংযোগ দিয়ে কোনো বাতাস বের হচ্ছে কি না। পুরোপুরি বায়ুরোধী না হলে কিন্তু মডেলটি কাজ করবে না।
  • একটি প্লাস্টিকের পানির বোতলের তলার অংশ কেটে বাদ দিয়ে দাও।
  • বোতলের মুখে একটা ছিদ্র করে নাও যাতে Y আকৃতির নলের খোলা প্রান্ত এর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো যায়। বেলুনসহ নলটিকে উল্টাদিকে ঘুরিয়ে বোতলের মুখের নিচ দিক দিয়ে প্রবেশ করাও যাতে বোতনের মুখের উপরে কিছুটা বাড়তি অংশ থাকে। এবার বোতলের মুখের ছিদ্রটি ভালো করে সিল করে (অল্প ময়দার সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে আঠার মতো তৈরি করে তা দিয়ে বোতলের মুখের ছিদ্রের চারপাশের অংশ বায়ুরোধী করে নিতে পারো) মুখটা বোতলের সঙ্গে প্যাঁচ দিয়ে লাগিয়ে নাও। প্রয়োজনে এখানেও স্কচটেপ পেঁচিয়ে নিতে পারো যাতে বাতাস না বের হতে পারে।
  • আরেকটি বেলুন নিয়ে এর মোটা মুখটি কেটে বাদ দাও এবং বেলুনটিকে ছবির মতো করে বোতলের তলায় লাগিয়ে দাও। বোতলের তলায় বেলুনটি যাতে আটকে থাকে সেজন্য স্কচটেপ পেঁচিয়ে খুব ভালোভাবে আটকে দাও।
  • ব্যাস তোমাদের শ্বসনতন্ত্রের মডেল তৈরি।
  • বোতলের তলায় লাগানো বেলুনটিকে পাশের ছবির মতো নিচের দিকে টেনে ধরো। দেখবে বোতলের ভেতরের বেলুন দুটি চুপসানো অবস্থা থেকে ফুলে উঠবে।
  • এক্ষেত্রে কোন অংশ শ্বসনতন্ত্রের কোন অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করা যায়? অনুসন্ধানী পাঠের 'বায়ু গ্রহণ ও ত্যাগ অঞ্চল' অংশটুকু পড়ে মডেলের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজে বের করতে পারো কি না দেখো। দলে আলোচনা করে তোমাদের উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • তোমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ তন্ত্রটি সুস্থ রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা, ব্যায়াম ও খেলাধুলা করা প্রয়োজন। তোমরা নিজেরাই ঘরে বসে করতে পারো এমন কিছু শ্বাসের ব্যায়ামের নির্দেশনা নিচে দেওয়া হলো। ক্লাসের সবাই মিলে এবার শিক্ষকের নির্দেশে এটি করা যাক।
  • যে যার অবস্থানে স্বাভাবিকভাবে বসে নাক দিয়ে বুক ভরে দম নাও। কিছুক্ষণ ধরে রেখে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে ছাড়ো। যতটা সময় ধরে নিঃশ্বাস নিয়েছ চেষ্টা করো ততটা সময় ধরে নিঃশ্বাস ছাড়তে। এভাবে এটা ৫-১০বার করো।
  • এই চর্চাটি তুমি তোমার শ্বাস নেওয়ার সময় হাত উপরে তুলে এবং শ্বাস ত্যাগ করার সময় হাত নিচে নামিয়েও করতে পারো।
  • এবার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ডান দিকের নাসারন্ধ্র চেপে ধরে বাম নাসারন্ধ্র দিয়ে নিঃশ্বাস নাও। কিছুক্ষণ দম ধরে রেখে বাম নাসারন্ধ্রটিকে অনামিকা আঙুল দিয়ে চেপে ধরো এবং বৃদ্ধাঙ্গুল সরিয়ে ডান নাসারন্ধ্র দিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করো। এভাবে ৫-৭বার এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করো।
  • তারপর একইভাবে বাম হাত ব্যবহার করে উল্টো কাজ করো।
  • এই কয়েকবার শ্বাসের ব্যায়াম করার পর এখন বলো তো আগের চেয়ে বেশি ফুরফুরে ও চাঙ্গা লাগছে কি না?

ষষ্ঠ সেশন

  • একটা মেশিনে কোনো কিছু উৎপাদন করতে হলে যেমন কিছু কাঁচামাল লাগে তেমনি উৎপাদনের সময় অথবা উৎপাদন শেষে কিছু বর্জ্য অথবা উপজাত পদার্থও তৈরি হয়। এবার একটু ভেবে বলো তো, আমরা সারাদিন যে খাবার ও পানি খাই সেগুলো কোথায় যায়? এই খাদ্য ও পানীয় থেকে দেহ পুষ্টি গ্রহণ করার পর বর্জ্য হিসেবে কী উৎপন্ন হয়? এই বর্জ্য, বিশেষ করে তরল বর্জ্য হিসেবে কী উৎপন্ন হয়? শরীরের কোন অংশে এগুলো উৎপন্ন হয়?
  • নিশ্চয়ই বলবে ঘাম আর মূত্র আকারে আমাদের শরীরের তরল বর্জ্য নিষ্কাশন হয়। ত্বকতন্ত্র কীভাবে ঘাম উৎপন্ন করে তা তো ইতোমধ্যেই জেনেছ। কিন্তু শরীরের কোন অংশে মূত্র তৈরি হয় তা কি বলতে পারবে? এই প্রক্রিয়ার নাম কী?
  • অনেকেই হয়তো আগেই জানো যে রেচন প্রক্রিয়ায় মূত্র উৎপন্ন হয়, আর এই রেচনতন্ত্রের মূল অঙ্গ হলো কিডনি বা বৃক্ক। এখন এই রেচন প্রক্রিয়া কীভাবে ঘটে তা দেখা যাক।
  • রেচন প্রক্রিয়াকে তোমরা ছাঁকনের সঙ্গে তুলনা করতে পারো। তবে এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি ঘটে উলটোভাবে। আমরা যখন চা ছেঁকে খাই তখন তলানির চা পাতা ছাঁকনিতে জমা হয় যা আমরা পরে ফেলে দিই, আর ছাঁকনির মধ্য দিয়ে তরল চা বের হয়ে যায়। আর রেচন প্রক্রিয়ায় এই বর্জ্য আলাদা করার প্রক্রিয়াটি ঘটে উলটোভাবে। মানে রেচনতন্ত্র শরীরের জন্য পুষ্টিকর বা প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোকে শোষণ করে, আর তরল বর্জ্যকে শরীর থেকে বের করে দেয়।
  • অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে বৃক্কের গঠন ও কীভাবে কাজ করে তা ভালো করে পড়ে নাও। যথারীতি পড়ার পর দলের সবাই আলোচনা করো।

সপ্তম সেশন

  • এই সেশনে রেচনতন্ত্রের গঠন ও কাজ আরেকটু খুঁটিয়ে দেখা যাক। আগের সেশনে তোমরা বৃক্কের গঠন ও কাজ কিছুটা জেনেছ। আজকে রেচনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গসমূহের বর্ণনা, বৃক্কের গঠন ও রক্ত পরিশোধনের ধাপসমূহ আবার ভালো করে পড়ে দলে আলোচনা করে নাও।
  • পুরো প্রক্রিয়া ভালোভাবে বোঝার সুবিধার্থে খাতায় রেচনতন্ত্র ও বৃক্কের গঠন আলাদা আলাদা করে এঁকে নিতে পারো। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
  • এখন তোমাদের কাজ হলো অন্য দলের সদস্যদের পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করা। লটারির মাধ্যমে তোমাদের দল থেকে একজনকে নির্বাচন করো যার কাজ হলো পরবর্তী দলের কাছে গিয়ে রেচনতন্ত্রের পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করবে। একইভাবে অন্য কোনো দল থেকেও লটারির মাধ্যমে একজন সদস্য এসে তোমাদের দলের বাকি সদস্যদের একই বিষয় ব্যাখ্যা করবে। এই ব্যাখ্যা করার সময় তোমাদের দলের কারো মনে প্রশ্ন থাকলে তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারো, তাতে সবার ধারণা স্পষ্ট হয়ে যাবে। এই ব্যাখ্যা করার সময় দুটি বিষয় উল্লেখ করতে পারো। আলোচনার সুবিধার্থে আগেই নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  1. রেচনতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গ কীভাবে একসঙ্গে কাজ করে? রেচন প্রক্রিয়ায় এদের কোনটির ভূমিকা কী?
  2. শরীরকে সুস্থ ও স্থিতিশীল রাখতে, স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়া চলমান রাখতে রেচনতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গ কীভাবে কাজ করে?

অষ্টম ও নবম সেশন

  • একটা সাইকেলের কথাই যদি তুমি ধরো, এর চাকাকে ঘোরানো হয় চেইন টেনে। চেইনটাকে টানার জন্য প্রয়োজন হয় প্যাডেলের যেখানে তুমি পা দিয়ে বল প্রয়োগ করো। তারপরেই না সাইকেলটি চলে। আবার থামানোর জন্য ব্রেক চাপতে হয়। আর তুমি কোন পথে যাবে তা নিয়ন্ত্রণ করো হ্যান্ডেল ধরে রেখে। অর্থাৎ এর প্রত্যেকটা অংশ আলাদা আলাদা কাজ করার মাধ্যমে তোমার সাইকেলটিকে সুশৃঙ্খলভাবে তুমি চালাতে পারো। ঠিক তেমনি, মানব শরীরের বিভিন্ন সিস্টেম বা তন্ত্র নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে আমাদের পুরো শরীর নামের সিস্টেমটিকে সচল রাখে।
  • তোমাদের কি মনে আছে তন্ত্র কী? শ্রেণিতে আলোচনা করে আরেকবার ঝালিয়ে নাও।
  • এবার জোড়ায় আলোচনা করে মানব শরীরের তন্ত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করে নাও। পরের পৃষ্ঠায় ছবিগুলো থেকে বিভিন্ন তন্ত্রের নাম ও এদের কাজ পাশের বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে নাও। ছক ১-এ এক লাইনে এই তন্ত্রসমূহের কাজগুলো লিখে রাখো।

তন্ত্রের নাম

মূল কাজ (এক বাক্যে)

 

 

 

 
  • এবার একটু ভেবে দেখো, অসুখবিসুখ হলে তোমরা যখন ডাক্তারের কাছে যাও, ডাক্তার কী ধরনের টেস্ট বা পরীক্ষা করতে দেন? প্রায়ই তা হয় রক্ত পরীক্ষা, কিংবা ইউরিন বা মূত্র পরীক্ষা; তাই না? তোমাদের কখনও মনে প্রশ্ন এসেছে, শরীরের বিভিন্ন অংশে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা কীভাবে মূত্র বা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়? রেচনতন্ত্র কীভাবে কাজ করে তা তোমরা ইতোমধ্যে জেনেছ, রক্ত সংবহনতন্ত্র সম্পর্কেও উপরের শ্রেণিতে তোমরা জানবে। কিন্তু শরীরের অন্যান্য তন্ত্রের কাজের সঙ্গে কি এই তন্ত্রসমূহের কাজের সম্পর্ক আছে?
  • এই বিষয়ে একটু বিস্তারিত জেনে নিতে এই সেশনে তোমরা কোনো পেশাদার ডাক্তারকে তোমাদের ক্লাসে আমন্ত্রণ জানাতে পারো, সবচেয়ে ভালো হয় যদি তোমাদের কারো অভিভাবক থাকেন যিনি ডাক্তার। তার কাছে প্রশ্ন করে জেনে নাও:
  1. মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে কোন কোন সাধারণ রোগ শনাক্ত করা যায়?
  2. শরীরের কোন কোন তন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটলে এসব রোগ দেখা দেয়? 
  • এবার দলে বসে মানবদেহের একটা ছবি এঁকে নিয়ে বিভিন্ন তন্ত্র চিহ্নিত করে নাও। ডাক্তারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে কোন কোন তন্ত্রের কাজের সঙ্গে রেচনতন্ত্রের কাজের সম্পর্ক আছে তা ছবিতে দেখাও এবং ক্লাসের বাকিদের সামনে ব্যাখ্যা করো।
  • বুঝতেই পারছ, শরীর সুস্থ রাখতে এর সবকটি তন্ত্রকে একটা বড়ো সিস্টেম আকারে কাজ করতে হয়, আর এই সবকটি তন্ত্র একে অন্যের কাজকে প্রভাবিত করে। কাজেই সুস্থ থাকার জন্য পুরো শরীরের যত্ন নেয়াই জরুরি।
  • তোমরা এখন পর্যন্ত যেসব তন্ত্র সম্পর্কে জেনেছ, সেগুলো সুস্থ রাখতে কী কী সু-অভ্যাস করণীয়? দলে আলোচনা করে একটি তালিকা তৈরি করে ফেলতে পারো।
  • এবার তোমাদের দলের তালিকাটি অন্যান্য দলকে দেখাও। তাদের তালিকায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে কি না তা দেখো। সবার তালিকা থেকে নেয়া সু-অভ্যাসের একটি তালিকা তোমাদের শ্রেণিকক্ষে ঝুলিয়ে রাখতে পারো, যাতে নিজের যত্ন নিতে কেউ ভুলে না যায়!

ফিরে দেখা

  • এই শিখন অভিজ্ঞতায় তুমি নতুন কী শিখলে যা তুমি তোমার পরিবারের সবাইকে জানাতে চাও?
  • মানবশরীরের কোন তন্ত্রটি তোমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়? কেন?
  •  এই অভিজ্ঞতার কাজ করার পর ব্যক্তিগত অভ্যাসে তুমি কী কী পরিবর্তন আনতে চাও?
Content added By
Promotion